"ফিঙে আর কাক"


ছোটবেলায় কাক আর ফিঙে পাখির গল্প শুনেছিলাম । একদিন কি যেন নিয়ে তাদের মধ্যে খুবই ঝগড়া চলছিল । কাক বলল আমিই পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী পাখি । আমার মতো বড় আর শক্তিশালী পাখি এই বনে একটাও খুঁজে পাওয়া যাবে না ।ফিঙে বলল, উচ্চতা কিংবা শরীরের গঠন দেখে শক্তি মাপা যায় না । পরিশ্রম দিয়ে শক্তি মাপতে হয় । বনের সকল পাখি তাদের ঝগড়া পর্যবেক্ষণ করছিল। আর সত্যি বলতে কি, কাককে দেখে সবাই ভয়ও করত । কারণ কাকের কথা কেও অমান্য করলে বা তার কথা মেনে না নিলে , সে তাদের উপর নির্যাতন শুরু করত । এমনকি তাদের বাসা ভেঙে দিত, ডিম খেয়ে ফেলত, বাচ্চা মেরে ফেলত-- আরো কত কি!! তো সব পাখি সিদ্ধান্ত নিলো এই সুযোগে আমাদের কিছু একটা করতে হবে। আর এই গুরুভার দেওয়া হলো টুনটুনি পাখিকে।কারণ কাক টুনটুনির নাচ খুব পছন্দ করত।সে যদি একটা ভুল করেও ফেলে, কাক সেটা কিছু মনে করে না।তাই দায়িত্বটা তাকেই দেওয়া হলো।তো সকল পাখিকে সঙ্গে করে টুনটুনি কাক আর ফিঙে পাখির কাছে উপস্থিত হলো। টুনটুনি বলল, মহারাজা কাক যদি একটু ভরসা দিতেন তো ঝগড়াটা নিরসনের জন্য আমি একটা কথা বলতাম। সকল পাখি সম্মত দিলো যে তাকে বলতে দেওয়া হোক। সকল পখির সমস্বর শুনে কাক আর না করতে পারলো না। তো টুনটুনি কাককে বলল, হে মহামান্য রাজা আপনি তো অনেক শক্তিশালী, আমি জানি আপনি যেকোন পরিস্থিতিতে জয়লাভ করবেন।কাক মনে মনে খুশি হলো কিন্তু চক্রান্তটা বুঝতেই পারল না। সে বলল, বল নাচনে টুনটুনি তুমি কি বলতে চাও!! টুটুনটুনি বলল, এই বনের সবচেয়ে যেটি বড় গাছ সেটির মগডালে উঠে বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে চাঁদে পৌঁছতে হবে। যে আগে পৌছতে পারবে সেই হবে বিজয়ী এবং আমরা তাকেই শক্তিশালী ভাববো। কাক অনেক নদী, সমুদ্র পাড়ি দিয়েছে এবং গন্তবেও পৌঁছেছে। কিন্তু তার ধারণা ছিল না যে চাঁদের দূরত্ব কতটুকু? সে ভাবল চাঁদকে তো কাছেই মনে হয় এর দূরত্ব আবার কতটুকু আর হবে! সে চোখ বুজে রাজি হয়ে গেল। দিন ঠিক হলো আগামীকাল সন্ধ্যায় ঠিক সূর্যাস্তের পরপরই প্রতিযোগীতা শুরু হবে। আজ তোমরা প্রস্তুতি নাও। এদিকে ফিঙের সাথে টুনটুনির দল আজ সন্ধ্যায় গিয়ে তাদের গোপন তথ্য শেয়ার করল আর বলল তুমি উড্ডয়ন প্রতিযোগীতায় অংশ গ্রহন করবে  ঠিকই কিন্তু তোমাকে পাশ কাটিয়ে পালিয়ে আসতে হবে যেন কাক তোমাকে দেখতে না পায়। এদিকে একদিন পার হয়ে উড্ডয়ন প্রতিযোগীতার সময় ঘনিয়ে এলো। প্রতিযোগীতার কথা সমস্ত  বনে রটে গিয়েছিল। তাই গতকাল যেসব পাখি উপস্থিত ছিল না তারাও আজ উপস্থিত হয়েছিল।ফিঙে আর কাক বড় একটি অশ্বত্থ গাছের মগডালে উঠে টুনটুনির বাঁশির অপেক্ষা করতে লাগল। চারদিক থেকে যেন হৈ চৈ এর ঢোল পড়ে গেল। টুনটুনির বাঁশির সুর শোনা গেলেই ফিঙে আর কাক বিশাল ডানা ঝাটকানা দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছনোর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো। কাক তো কিছুই না বুঝে চোখ বুজে যতটুকু সম্ভব দেহের সমস্ত শক্তি দিয়ে উড়বার চেষ্টা করল। এদিকে ফিঙে কাককে চোখ বুজে থাকতে দেখে গোপনে সরে সবার সাথে যোগ দিল এবং সমস্বরে কাককে জিতানোর জন্য উৎসাহ দিতে লাগল। এদিকে কাক উড়তে উড়তে মেঘের রাজ্যে পৌঁছে গেল। চোখ খুলে যখন ফিঙেকে না দেখতে পেল, তখন সে আরো জোরে তার শেষ শক্তি দিয়ে চেষ্টা করতে লাগল। সে এমন এক পর্যায়ে পৌছল যখন সে বুঝতেই পারল না তার দেহের অবস্থান কোথায় এবং সে উড়ছে নাকি স্থির রয়েছে। প্রচন্ড ঘামে তার পালক খসে পড়তে শুরু করল।সে জেতার আশা ত্যাগ করে তার আগের অবস্থানে ফিরে যেতে চাইল। কিন্তু ফিরে যাবার শক্তি ততক্ষণে সে হারিয়ে ফেলেছিল।তার পাখা অকেজো মনে হলো এবং সে হাওয়াতে ভেসে যেতে লাগল। নিষ্ঠুর বাতাস তাকে জলে আছড়ে ফেলে দিল।কাকের জীবনের ইতি এখানেই শেষ হলো।
তাহলে বন্ধুরা দেখলে তো অহংকার মানুষকে কোথায় পৌঁছায়।
এজন্য গুরুজনরা বলে থাকেন,  অহংকার পতনের মূল।
বি:দ্র: ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

Comments

Popular posts from this blog

ভালোবাসার মানুষটাকে না'কি ভুলা সম্ভব না

এক অস্ফুট মায়া

"গল্পটা একটু ভিন্নরকম"